সকালে কলা খাওয়ার অপকারিতা সম্পকে জানুন
সুস্বাদু ফলের মধ্যে অন্যতম হলো কলা। ছোট থেকে বড় সকলেই কলা খেতে খুব পছন্দ করে। ভারত, বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই কলা দেখতে পাওয়া যায়। বাজার থেকে খুব সহজে এবং অল্প খরচে আমরা কলা পেয়ে থাকি। এটি লম্বাটে হলুদ রঙের হয়ে থাকে।
এই কলার নানাবিধ উপকারিতা রয়েছে যেমন- কলা হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করা থেকে শুরু করে হজমে সহায়তা করে,তাৎক্ষণিক শক্তির যোগান দেয়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে,ত্বক উজ্জ্বল করে। তাই আমাদের জানা উচিত কলা খাওয়ার ১১টি উপকারিতা সম্পর্কে।
সকালে খালি পেটে কলা খাওয়ার উপকারিতা
পুষ্টিগুণ:
আরো পড়ুন:খালি পেটে টক দই খাওয়ার ৫ টি উপকারিতা সম্পকে বিস্তারিত জানুন।
কলা পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার, ভিটামিন B6, ভিটামিন C সমৃদ্ধ।
এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
উপকারিতা:
- হজমশক্তি উন্নত করে: কলাতে থাকা ফাইবার হজমশক্তি উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- শক্তি বৃদ্ধি করে: কলাতে থাকা প্রাকৃতিক চিনি দ্রুত শরীরে শক্তি যোগায়।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে: কলাতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- মাথাব্যথা দূর করে: কলাতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম মাথাব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।
- রক্তাল্পতা দূর করে: কলাতে থাকা আয়রন রক্তাল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
- হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: কলাতে থাকা ক্যালসিয়াম হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- মানসিক প্রশান্তি দেয়: কলাতে থাকা ট্রিপটোফ্যান মানসিক প্রশান্তি দিতে সাহায্য করে।
- ঘুম ভালো করে: কলাতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ঘুম ভালো করতে সাহায্য করে।
সতর্কতা:
- ডায়াবেটিস রোগীদের খালি পেটে কলা খাওয়া উচিত নয়।
- ঠান্ডা কলা খাওয়া উচিত নয়।
- কলা খাওয়ার পর প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত।
পরিশেষে, সকালে খালি পেটে কলা খাওয়া একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের এবং ঠান্ডা লাগার সমস্যা থাকলে সতর্কতার সাথে খাওয়া উচিত।
দুধ কলা খাওয়ার উপকারিতা
পুষ্টিগুণ:
- দুধ প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন A, ভিটামিন D, রিবোফ্লাভিন সমৃদ্ধ।
- কলা পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার, ভিটামিন B6, ভিটামিন C সমৃদ্ধ।
- এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
উপকারিতা:
- শক্তি বৃদ্ধি করে: দুধ ও কলাতে থাকা প্রাকৃতিক চিনি দ্রুত শরীরে শক্তি যোগায়।
- হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: দুধ ও কলাতে থাকা ক্যালসিয়াম হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- মাংসপেশীর বৃদ্ধি: দুধে থাকা প্রোটিন এবং কলাতে থাকা পটাশিয়াম মাংসপেশীর বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে: দুধ ও কলাতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- হজমশক্তি উন্নত করে: কলাতে থাকা ফাইবার হজমশক্তি উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- রক্তাল্পতা দূর করে: দুধ ও কলাতে থাকা আয়রন রক্তাল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
- মানসিক প্রশান্তি দেয়: দুধ ও কলাতে থাকা ট্রিপটোফ্যান মানসিক প্রশান্তি দিতে সাহায্য করে।
- ঘুম ভালো করে: দুধ ও কলাতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ঘুম ভালো করতে সাহায্য করে।
সতর্কতা:
- ডায়াবেটিস রোগীদের দুধ কলা খাওয়া উচিত নয়।
- ঠান্ডা লাগার সমস্যা থাকলে দুধ কলা খাওয়া উচিত নয়।
- দুধ ও কলা একসাথে খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে।
পরিশেষে, দুধ ও কলা পুষ্টিকর খাবার। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের এবং ঠান্ডা লাগার সমস্যা থাকলে সতর্কতার সাথে খাওয়া উচিত।
আরো পড়ুন:পেটে বুট বুট করলে করনীয় কি? এমন সময় কি করবেন।
বিকল্প:
দুধ ও কলা আলাদা আলাদা সময়ে খাওয়া যেতে পারে।
কলা দিয়ে দই খাওয়া যেতে পারে।
সকালে কলা খাওয়ার অপকারিতা
সকালে খালি পেটে কলা খাওয়ার অপকারিতা:
কলা পুষ্টিকর খাবার হলেও সকালে খালি পেটে কলা খাওয়ার কিছু অপকারিতা রয়েছে।
১) হজমে সমস্যা:
খালি পেটে কলা খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে। কারণ কলাতে থাকা ফাইবার পেটে গিয়ে জেলের মতো আকার ধারণ করে, যা হজমে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়াও, কলাতে থাকা পটাশিয়াম রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি করে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে পারে।
২) রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি:
কলাতে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি থাকে। খালি পেটে কলা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি বিশেষভাবে ক্ষতিকর।
৩) মাথাব্যথা:
খালি পেটে কলা খেলে মাথাব্যথা হতে পারে। কারণ কলাতে থাকা টাইরামিন নামক উপাদান মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।
৪) অ্যাসিডিটি:
খালি পেটে কলা খেলে অ্যাসিডিটি হতে পারে। কারণ কলাতে থাকা অ্যাসিড পেটে অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে।
৫) পুষ্টির ঘাটতি:
খালি পেটে কলা খেলে শরীর অন্যান্য খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষণ করতে পারে না।
আরো পড়ুন:পাকা কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন
সতর্কতা:
- ঠান্ডা লাগার সমস্যা থাকলে সকালে খালি পেটে কলা খাওয়া উচিত নয়।
- অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকলে সকালে খালি পেটে কলা খাওয়া উচিত নয়।
ভরা পেটে কলা খেলে কি হয়
ভরা পেটে কলা খেলে কতগুলি সম্ভাব্য প্রভাব হতে পারে, যার মধ্যে কিছু উপকারী এবং কিছু ক্ষতিকর।
উপকারী প্রভাব:
- পুষ্টির ঘাটতি পূরণ: কলা ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। ভরা পেটে কলা খেলে এই পুষ্টি উপাদানগুলি শরীরে শোষিত হতে সাহায্য করে।
- শক্তির স্তর বৃদ্ধি: কলায় প্রাকৃতিক চিনি থাকে যা দ্রুত শক্তি প্রদান করে। ভরা পেটে কলা খেলে দীর্ঘ সময় ধরে শক্তির স্তর বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- হজম উন্নত: কলায় ফাইবার থাকে যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
ক্ষতিকর প্রভাব:
- অ্যাসিডিটি: ভরা পেটে কলা খেলে কিছু লোকের অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে।
- গ্যাস: কলায় ফাইবার থাকে যা কিছু লোকের পেটে গ্যাস তৈরি করতে পারে।
- রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি: কলায় প্রাকৃতিক চিনি থাকে যা রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের ভরা পেটে কলা খাওয়ার সময় সতর্ক থাকা উচিত।
- ওজন বৃদ্ধি: ভরা পেটে কলা খেলে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে, কারণ এতে অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ করা হয়।
কখন ভরা পেটে কলা খাওয়া উচিত:
- ব্যায়ামের পর: ব্যায়ামের পর ভরা পেটে কলা খেলে দ্রুত শক্তি পুনরুদ্ধার করতে এবং পেশী টিস্যু মেরামত করতে সাহায্য করে।
- দীর্ঘ ভ্রমণের সময়: দীর্ঘ ভ্রমণের সময় ভরা পেটে কলা খেলে দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরা রাখতে এবং ক্ষুধা রোধ করতে সাহায্য করে।
কখন ভরা পেটে কলা খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে:
- অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকলে: অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকলে ভরা পেটে কলা খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
- ডায়াবেটিস থাকলে: ডায়াবেটিস রোগীদের ভরা পেটে কলা খাওয়ার সময় সতর্ক থাকা উচিত এবং রক্তে শর্করার মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা উচিত।
- ওজন কমাতে চাইলে: ওজন কমাতে চাইলে ভরা পেটে কলা খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
আরো পড়ুন:টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির খাবার তালিকা জেনে রাখুন?
কিছু টিপস:
ভরা পেটে কলা খেলে অল্প পরিমাণে খাও
কলা খাওয়ার সঠিক সময়
কলা খাওয়ার সঠিক সময় নির্ভর করে আপনার ব্যক্তিগত শারীরিক অবস্থা, খাওয়ার উদ্দেশ্য এবং জীবনধারার উপর।
সাধারণভাবে, কলা খাওয়ার জন্য কিছু ভালো সময় :
• সকালের নাস্তার সাথে: কলা সকালের নাস্তার জন্য একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে। এটি দীর্ঘ সময় ধরে আপনাকে শক্তি প্রদান করবে এবং আপনার ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।
• ব্রেকফাস্ট এবং দুপুরের খাবারের মাঝে: কলা ব্রেকফাস্ট এবং দুপুরের খাবারের মাঝে জলখাবার হিসেবে খাওয়া যেতে পারে। এটি আপনার ক্ষুধা মেটাতে এবং আপনার শক্তির স্তর বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
• ব্যায়ামের আগে বা পরে: ব্যায়ামের আগে কলা খেলে আপনাকে শক্তি প্রদান করবে এবং ব্যায়ামের পরে খেলে আপনার পেশী টিস্যু পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করবে।
• ঘুমাতে যাওয়ার আগে: ঘুমাতে যাওয়ার আগে কলা খেলে আপনাকে রাতের বেলায় ক্ষুধা থেকে রক্ষা করবে এবং আপনার ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করবে।
আরো পড়ুন:কাঠ বাদাম ও কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জাজুন
কিছু টিপস:
- খালি পেটে কলা খাওয়া এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- একবারে অতিরিক্ত পরিমাণে কলা খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
- রাতের খাবারের সাথে কলা খাওয়া এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি আপনার ওজন বৃদ্ধি করতে পারে।
- আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে কলা খাওয়ার বিষয়ে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
কলা খাওয়ার সময় আপনার শরীরের কথা শুনুন।
আপনার যদি কোনো হজমের সমস্যা হয়, তাহলে ভরা পেটে কলা খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
• ঘুম ভালো করতে সাহায্য করে: কলাতে ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে যা সেরোটোনিন এবং মেলাটোনিনে রূপান্তরিত হয়। এই হরমোনগুলি ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে।
• পেশী শিথিল করে: কলাতে পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা পেশী শিথিল করতে এবং রাতের বেলায় পেশী খিঁচুনি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুন:টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির খাবার তালিকা জেনে রাখুন?
• হজম উন্নত করে: কলাতে ফাইবার থাকে যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
• রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে: কলাতে পটাশিয়াম থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
• শক্তি সরবরাহ করে: কলাতে কার্বোহাইড্রেট থাকে যা শরীরে শক্তি সরবরাহ করে।
• পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ: কলা ভিটামিন A, C, B6, এবং পটাশিয়ামের একটি ভালো উৎস।
কিছু সতর্কতা:
- রাতে ঘুমানোর ঠিক আগে কলা খাওয়া উচিত নয়। কারণ এতে হজমের সমস্যা হতে পারে।
পরিশেষে, রাতে কলা খাওয়ার কিছু উপকারিতা এবং সতর্কতা রয়েছে। আপনার শারীরিক অবস্থা এবং খাওয়ার উদ্দেশ্য বিবেচনা করে রাতে কলা খাওয়া উচিত কিনা তা স্থির করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url