মাথা ব্যাথা ও বমি ভাব কিসের লক্ষণ ও দূর করার উপায় জানুন।
আপনার সারাক্ষণ মাথায় ব্যথা করে? সঙ্গে সঙ্গে বমি বমি ভাব আছে? তাহলে আর অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান। ব্রেন সিস্টের লক্ষণ এটা!মাথা ব্যথাকে আমরা অনেকেই পাত্তা দিই না। সাধারণ সমস্যা বলে এড়িয়ে যাই। কিন্তু সবসময় মাথা ব্যথা মানেই সাধারণ সমস্যা নয়, এর পিছনে থাকতে পারে অন্য কারণ।
মাথা ব্যাথা ও বমি ভাব কিসের লক্ষণ
মাথা ব্যাথা ও বমি ভাব বিভিন্ন কারণে হতে পারে। কিছু সাধারণ কারণ হল:
১. মাইগ্রেন: মাইগ্রেন মাথাব্যথার সাথে বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া একটি সাধারণ লক্ষণ। মাইগ্রেনের ব্যথা সাধারণত মাথার একপাশে থাকে এবং তীব্র হতে পারে।
২. টেনশন হেডেক: টেনশন হেডেক মাথাব্যথার আরেকটি সাধারণ কারণ যা বমি বমি ভাবের সাথে যুক্ত হতে পারে। টেনশন হেডেকের ব্যথা সাধারণত মাথার চারপাশে থাকে এবং হালকা থেকে মাঝারি তীব্রতার হতে পারে।
৩. সাইনাস ইনফেকশন: সাইনাস ইনফেকশন মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব এবং জ্বরের কারণ হতে পারে।
৪. মেনিনজাইটিস: মেনিনজাইটিস হল মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের আবরণীর প্রদাহ। এটি মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, ঘাড় শক্ত হওয়া এবং জ্বরের কারণ হতে পারে।
৫. গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল (জিআই) সমস্যা: জিআই সমস্যা, যেমন ফুড পয়জনিং বা গ্যাস্ট্রোএসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD), মাথাব্যথা এবং বমি বমি ভাবের কারণ হতে পারে।
৬. ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ঔষধ মাথাব্যথা এবং বমি বমি ভাবের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
৭. ডিহাইড্রেশন: ডিহাইড্রেশন মাথাব্যথা এবং বমি বমি ভাবের কারণ হতে পারে।
৮. গর্ভধারণ: গর্ভধারণের সময় মাথাব্যথা এবং বমি বমি ভাব হওয়া একটি সাধারণ ঘটনা।
৯. মস্তিষ্কের টিউমার: মস্তিষ্কের টিউমার মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব এবং অন্যান্য লক্ষণগুলির কারণ হতে পারে।
১০. উচ্চ রক্তচাপ: উচ্চ রক্তচাপ মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব এবং দৃষ্টি সমস্যার কারণ হতে পারে।
যদি আপনার মাথাব্যথা এবং বমি ভাবের সাথে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলির কোনওটি থাকে তবে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সহায়তা নিন:
- তীব্র মাথাব্যথা
- ঘাড় শক্ত হওয়া
- জ্বর
- বিভ্রান্তি
- দৃষ্টি সমস্যা
- হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া
- বমি
- চেতনা হারানো
আপনার যদি মাথাব্যথা এবং বমি ভাব হয় তবে আপনার একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করা উচিত যাতে তারা আপনার লক্ষণগুলির কারণ নির্ণয় করতে পারে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা নির্ধারণ করতে পারে।
মাথা ব্যাথা বমি বমি ভাব ঔষধ
মাথা ব্যাথা ও বমি বমি ভাবের জন্য বিভিন্ন ওষুধ পাওয়া যায়। কিছু সাধারণ ওষুধ হল:
১. অ্যানালজেসিক: অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন এবং অ্যাসিটামিনোফেন মাথাব্যথার ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
২. অ্যান্টিমেটিক: মেটোক্লোপ্রামাইড এবং ডোম্পেরিডোন বমি বমি ভাব এবং বমি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৩. ট্রাইজাইক্লিক অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট (TCAs): অ্যামিট্রিপ্টিলাইন এবং নর্ট্রিপ্টিলাইন মাইগ্রেন প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
৪. বিটা-ব্লকার: প্রোপ্রানোলল এবং মেটোপ্রোলল মাইগ্রেন প্রতিরোধেও সাহায্য করতে পারে।
৫. ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার: ভেরাপামিল এবং নাইফেডাইপিন মাইগ্রেন প্রতিরোধেও সাহায্য করতে পারে।
৬. ঔষধের ব্যবহারের জন্য কিছু টিপস:
- আপনার ডাক্তারের নির্দেশাবলী অনুসারে ঔষধ খান।
- নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি ঔষধ খাবেন না।
- যদি আপনার ঔষধের প্রতি অ্যালার্জি থাকে তবে ডাক্তারকে জানান।
- গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী হলে ডাক্তারকে জানান।
- ঔষধ খাওয়ার সময় অ্যালকোহল পান করা এড়িয়ে চলুন।
কিছু ক্ষেত্রে, মাথাব্যথা এবং বমি বমি ভাবের জন্য ঘরোয়া প্রতিকারও সহায়ক হতে পারে। কিছু ঘরোয়া প্রতিকার হল:
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া
- প্রচুর পরিমাণে তরল পান করা
- ঠান্ডা সেঁক ব্যবহার করা
- আদা বা পুদিনা খাওয়া
- শিথিলকরণ কৌশল অনুশীলন করা, যেমন যোগব্যায়াম বা ধ্যান
আপনার যদি মাথাব্যথা এবং বমি বমি ভাব হয় তবে আপনার একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করা উচিত যাতে তারা আপনার লক্ষণগুলির কারণ নির্ণয় করতে পারে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা নির্ধারণ করতে পারে।
মাথা ব্যাথা ও বমি ভাব দূর করার উপায়
প্রাথমিক চিকিৎসা:
- বিশ্রাম: শান্ত ও অন্ধকার ঘরে শুয়ে বিশ্রাম নিন।
- পানি পান: প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। পানিশূন্যতা মাথাব্যথা ও বমি ভাব বাড়িয়ে দিতে পারে।
- ঠান্ডা সেঁক: মাথায় ঠান্ডা সেঁক দিন। ঠান্ডা সেঁক রক্তনালী সংকুচিত করে মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
- আদা: আদা বমি ভাব কমাতে সাহায্য করে। আদা চা বা আদা পানি খেতে পারেন।
- পেপারমিন্ট: পেপারমিন্ট তেল বমি ভাব কমাতে সাহায্য করে। পেপারমিন্ট তেল দিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন অথবা পেপারমিন্ট চা খেতে পারেন।
ঔষধ:
প্যারাসিটামল: মাথাব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল খেতে পারেন।
অ্যান্টি-ইমেটিক ঔষধ: বমি ভাব কমাতে অ্যান্টি-ইমেটিক ঔষধ খেতে পারেন।
কিছু টিপস:
- ঘুমের সময়সূচি: নিয়মিত ঘুমাতে যান এবং ঘুম থেকে উঠুন।
- মানসিক চাপ: মানসিক চাপ কমাতে চেষ্টা করুন।
- ধূমপান ও মদ্যপান: ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন।
- ক্যাফেইন: ক্যাফেইনযুক্ত খাবার ও পানীয় পরিহার করুন।
- খাবার: নিয়মিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
কখন ডাক্তার দেখাবেন:
- যদি মাথাব্যথা তীব্র হয় এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়।
- যদি বমি ভাব তীব্র হয় এবং বারবার বমি হয়।
- যদি মাথাব্যথার সাথে জ্বর, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা, হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়।
মনে রাখবেন: এই তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞানের জন্য। কোন ঔষধ সেবন করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
বমি বমি ভাব ও মাথা ঘোরা দূর করার উপায়
প্রাথমিক চিকিৎসা:
পানি পান: প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। পানিশূন্যতা বমি বমি ভাব ও মাথা ঘোরা বাড়িয়ে দিতে পারে।
বিশ্রাম: শান্ত ও অন্ধকার ঘরে শুয়ে বিশ্রাম নিন।
ঠান্ডা সেঁক: মাথায় ঠান্ডা সেঁক দিন। ঠান্ডা সেঁক রক্তনালী সংকুচিত করে মাথা ঘোরা কমাতে সাহায্য করে।
আদা: আদা বমি বমি ভাব কমাতে সাহায্য করে। আদা চা বা আদা পানি খেতে পারেন।
লেবু: লেবুর রসে থাকা অ্যাসিড বমি বমি ভাব কমায়। এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে লেবুর রস, এক চিমটি লবণ মিশিয়ে খেলে বমি বমি ভাব দূর হবে।
পেপারমিন্ট: পেপারমিন্ট তেল বমি বমি ভাব কমাতে সাহায্য করে। পেপারমিন্ট তেল দিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন অথবা পেপারমিন্ট চা খেতে পারেন।
কিছু টিপস:
- ঘুমের সময়সূচি: নিয়মিত ঘুমাতে যান এবং ঘুম থেকে উঠুন।
- মানসিক চাপ: মানসিক চাপ কমাতে চেষ্টা করুন।
- ধূমপান ও মদ্যপান: ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন।
- ক্যাফেইন: ক্যাফেইনযুক্ত খাবার ও পানীয় পরিহার করুন।
- খাবার: নিয়মিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
কখন ডাক্তার দেখাবেন:
যদি বমি বমি ভাব তীব্র হয় এবং বারবার বমি হয়।
যদি বমি বমি ভাব ও মাথা ঘোরার সাথে জ্বর, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা, হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়।
মনে রাখবেন: এই তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞানের জন্য। কোন ঔষধ সেবন করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
বমি বমি ভাব ও মাথা ঘোরার কিছু কারণ:
- গর্ভাবস্থা: গর্ভবতী মহিলাদের বমি বমি ভাব ও মাথা ঘোরা হওয়া খুবই স্বাভাবিক।
- মোশন সিকনেস: গাড়িতে, ট্রেনে, প্লেনে ভ্রমণ করলে অনেকের বমি বমি ভাব ও মাথা ঘোরা হয়।
- খাদ্য বিষক্রিয়া: খাদ্য বিষক্রিয়ার ফলে বমি বমি ভাব ও মাথা ঘোরা হতে পারে।
- অ্যাসিডিটি: অ্যাসিডিটির ফলে বমি বমি ভাব ও মাথা ঘোরা হতে পারে।
- নিম্ন রক্তচাপ: নিম্ন রক্তচাপের ফলে বমি বমি ভাব ও মাথা ঘোরা হতে পারে।
- ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে বমি বমি ভাব ও মাথা ঘোরা হতে পারে।
মাথা ব্যাথা ও বমি কোন রোগের লক্ষণ
মাথা ব্যাথা এবং বমি বমি ভাব বিভিন্ন রোগের লক্ষণ হতে পারে। কিছু সাধারণ কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:
মাইগ্রেন: এটি একটি ধরণের মাথা ব্যাথা যা সাধারণত মাথার একপাশে তীব্র ব্যথা হয়। এটি বমি বমি ভাব, বমি এবং আলো ও শব্দের প্রতি সংবেদনশীলতার সাথেও যুক্ত হতে পারে।
টেনশন-টাইপ হেডেক: এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরণের মাথাব্যথা। এটি সাধারণত মাথার চারপাশে একটি শক্ত বা চাপ দেওয়ার অনুভূতি হিসাবে বর্ণনা করা হয়। এটি বমি বমি ভাব বা বমি দিয়েও যুক্ত হতে পারে।
সাইনাস সংক্রমণ: এটি সাইনাসের প্রদাহ, যা মুখ এবং চোখের চারপাশে অবস্থিত খালি পকেট। এটি মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি এবং মুখের ব্যথা হতে পারে।
গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস: এটি পেট এবং অন্ত্রের একটি সংক্রমণ। এটি বমি বমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া এবং পেটে ব্যথা হতে পারে।
মেনিনজাইটিস: এটি মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের চারপাশে আবরণগুলির প্রদাহ। এটি মাথাব্যথা, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, জ্বর এবং আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা হতে পারে।
মস্তিষ্কের টিউমার: এটি মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি। এটি মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি এবং দৃষ্টি পরিবর্তনের কারণ হতে পারে।
আপনি যদি মাথাব্যথা এবং বমি বমি ভাব অনুভব করেন তবে অন্তর্নিহিত কারণ নির্ধারণের জন্য একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করা গুরুত্বপূর্ণ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url