কোন কোন দিন রোজা রাখা নিষেধ জেনে নিন।

রোজা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। একজন মুসলিমকে ইসলামের যে মৌলিক বিষয়গুলো মেনে চলতে হয় তার একটি রোজা। বছরে এক মাস রোজা রাখা ফরজ। এছাড়াও পুরো বছর প্রত্যেক সপ্তাহ, মাস ও বিশেষ দিনে বেশ কিছু নফল রোজা রয়েছে। যা পালনে বিশেষ সওয়াবের কথা বর্ণিত হয়েছে হাদিসে।

কোন কোন দিন রোজা রাখা নিষেধ জেনে নিন।

সপ্তাহে কোন দিন রোজা রাখা নিষেধ

তবে, কিছু ক্ষেত্রে শুক্রবার রোজা রাখা জায়েজ হতে পারে, যেমন:
  • কাফফারা আদায়ের জন্য: যদি কেউ কোন শপথ ভঙ্গ করে বা ইহরাম অবস্থায় শিকার করে থাকে, তাহলে কাফফারা হিসেবে শুক্রবার রোজা রাখা যাবে।
  • নذر পূরণের জন্য: যদি কেউ শুক্রবার রোজা রাখার নذر করে থাকে, তাহলে সেই নذر পূরণের জন্য রোজা রাখা যাবে।

আরো পড়ুন: রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ রোজা নিয়ে আরও কিছু প্রশ্নের জবাব।

  • শনিবারের সাথে যুক্ত করে: যদি কেউ বৃহস্পতিবার সূর্যাস্তের পর থেকে শনিবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত একটানা রোজা রাখে (যাকে আশুরা রোজা বলা হয়), তাহলে শুক্রবার রোজা রাখা জায়েজ হবে।
বাদ দেওয়া উচিত:
  • শুক্রবার রোজা রাখা নিয়মিতভাবে বাদ দেওয়া উচিত।
  • শুক্রবার রোজা রাখার فضילת নেই।
  • শুক্রবার রোজা রাখার ব্যাপারে ভুল ধারণা রয়েছে।

কোন কোন দিন রোজা রাখা হারাম

ইসলামে নিম্নলিখিত দিনগুলিতে রোজা রাখা হারাম:

১. ঈদুল ফিতর: ঈদুল ফিতরের দিন রোজা রাখা হারাম। কারণ, ঈদুল ফিতর হলো আনন্দ ও উৎসবের দিন। এই দিনে রোজা রাখা আনন্দের পরিপন্থী।

২. ঈদুল আযহার পরবর্তী তিন দিন: ঈদুল আযহার পরবর্তী তিন দিন (১০, ১১ ও ১২ জিলহজ) রোজা রাখা হারাম। এই দিনগুলিকে তashriq বলা হয়। এই দিনগুলিতে তাশরিকের তাকবির বলা এবং মাংস খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।

আরো পড়ুন: রোজা না রাখার শাস্তি হাদিস জেনে নিন।

৩. হজের সময় আরাফাতের দিন: হজের সময় আরাফাতের দিন রোজা রাখা হারাম। এই দিনে হজের বিশেষ দোয়া-দরুদ ও ইবাদত-বন্দেগি করা হয়।

৪. সারা বছর বিরামহীনভাবে রোজা রাখা: সারা বছর বিরামহীনভাবে রোজা রাখা হারাম। কারণ, এর ফলে শারীরিকভাবে ক্ষতি হতে পারে।

৫. শুক্রবার: নিয়মিতভাবে শুক্রবার রোজা রাখা হারাম। তবে, কিছু ক্ষেত্রে শুক্রবার রোজা রাখা জায়েজ হতে পারে। যেমন:
কাফফারা আদায়ের জন্য
নذر পূরণের জন্য
শনিবারের সাথে যুক্ত করে (আশুরা রোজা)

উল্লেখ্য, উপরে উল্লেখিত দিনগুলি ছাড়াও অন্যান্য দিনে রোজা রাখা মুস্তাহাব।

নফল রোজা রাখার নিয়ম

নিয়ত:
নিয়ত মনে মনে করা যাবে, অথবা মুখে বলতেও পারবে।
নিয়তের উদাহরণ: "হে আল্লাহ, আমি আগামীকাল আপনার জন্য নফল রোজা রাখছি।"

সেহরি:
ফজরের আযানের পূর্বে সেহরি খাওয়া সুন্নত।

আরো পড়ুন: পিরিয়ডের কত দিন পর রোজা রাখা যাবে জেনে নিন।

রোজা:
এই সময়ের মধ্যে কোন কিছু খাওয়া-দাওয়া করা যাবে না।
সহবাস করা, ধূমপান করা, মিথ্যা বলা, গীবত করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে।

ইফতার:
সূর্যাস্তের পর ইফতার করা হবে।
ইফতারের সময় খেজুর দিয়ে শুরু করা সুন্নত।
ইফতারে অল্প পরিমাণে খাবার খাওয়া উচিত।
নফল রোজার কিছু বিশেষ নিয়ম:
  • নফল রোজা রাখা ওয়াজিব নয়, তাই কেউ যদি রোজা রাখতে না পারে, তাহলে তার কোন গুনাহ হবে না।
  • নফল রোজা রেখে ছেড়ে দেওয়া গুনাহ, তবে কাফফারা আদায় করতে হবে না।
  • নিয়মিতভাবে শুক্রবার রোজা রাখা হারাম।
  • ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহার পরবর্তী তিন দিন এবং হজের সময় আরাফাতের দিন রোজা রাখা হারাম।

আরো পড়ুন: মাসিক অবস্থায় মহিলাদের নামাজ রোজার বিধান কি

নফল রোজার ফজিলত:
  • নফল রোজা আল্লাহর রহমত লাভের মাধ্যম।
  • নফল রোজা গুনাহের কাফফারা।
  • নফল রোজা জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়।

সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার ফজিলত

হাদিসে রাসুল (সাঃ) থেকে বর্ণিত:
  • আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসুল (সাঃ) বলেছেন, "সপ্তাহে দুই দিন রোজা রাখার ফজিলত হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তির মতো।" (তিরমিযী)
  • আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসুল (সাঃ) বলেছেন, "সপ্তাহে দুই দিন রোজা রাখার ফজিলত হলো পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল গুনাহের কাফফারা।" (মুসলিম)
সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত:
  • এই দুই দিনে আল্লাহর কাছে আমল পেশ করা হয়: সোমবার ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর কাছে বান্দাদের আমল পেশ করা হয়। তাই এই দুই দিন রোজা রাখার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভ করা সম্ভব।

আরো পড়ুন: সপ্তাহে কোন কোন দিন রোজা রাখা সুন্নত বিস্তারিত জানুন।

  • এই দুই দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তির দিন: হাদিসে রাসুল (সাঃ) থেকে বর্ণিত যে, সোমবার ও বৃহস্পতিবার জাহান্নাম থেকে মুক্তির দিন। এই দুই দিন রোজা রাখার মাধ্যমে জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্তি পাওয়ার আশা করা যায়।
  • এই দুই দিন রোজা রাখা নবী (সাঃ) এর অনুসরণ: রাসুল (সাঃ) নিয়মিতভাবে সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। তাই এই দুই দিন রোজা রাখার মাধ্যমে নবী (সাঃ) এর অনুসরণ করা সম্ভব।
উল্লেখ্য, সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা ওয়াজিব নয়, তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নফল ইবাদত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url